বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
• মোঃ রোমান মিয়া:
প্লাবন ও বর্ষার ভয়াল রূপ হলো বন্যা। বন্যার করালগ্রাসে মানুষের স্বাভাবিক জীবনমান ব্যাহত হচ্ছে বা হয়ে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থান এমন এক জায়গায় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন এদেশের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশাল গঙ্গা যমুনা, মেঘনা, নদী বয়ে গেছে এ দেশের উপর দিয়ে। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এদেশের উপর দিয়ে বয়ে থাকে। যার ফলে সূচনা হয় বর্ষার।একদিকে বরফ গলা পানি দিয়ে নদ-নদীগুলো ভরে উঠতে থাকে। অপরদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানি নদীর দু’কূল ছাপিয়ে তৃণভূমিতে প্লাবিত হয়। যার ফলে দেখা দেয় বন্যা। বন্যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য হুমকি ও অভিশাপ। বন্যার করালগ্রাসে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বিপন্ন হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ ও গৃহ পালিত পশু প্রাণ হারায়। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী মহাপ্লাবন।এ মহাপ্লাবনে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রাণহানি ঘটে থাকে।ঘর-বাড়ি কৃৃষি ফলন ও মূল্যবান সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। সাম্প্রতিক সিলেটে টানা বৃষ্টি পাতের ফলে এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গ আসাম হতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আসায় সিলেটের সুরমা, কুসিয়ারি ও বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণ ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র পানি আর পানি। বলতে গেলে বন্যার ভয়াবহতা পুরো সিলেট জুড়ে। অথচ বাংলাদেশে স্ব-ঘোষিত একমাত্র স্মার্ট সিটি আজ পানির নিচে। পানির ভয়াল প্রবাহে জন জীবন আজ বিপর্যস্ত। পানির ঢলে, প্রবল বন্যায়, গৃহহীন, সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন এ এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বোবা কান্না করছে সিলেটের লোকজন। আর কতো কষ্ট সহ্য করলে আমরা তাকে বলি দুঃখ সেই কষ্ট এখন সিলেটবাসীর। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সিলেট শহর। অসহায়ত্ব কাকে বলে এখন হাড়ে হাড়ে ঢের পাচ্ছে সিলেটের মাটি ও মানুষ।
সিলেটের স্থানীয় মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ, শিশুসন্তান বেশি, কিংবা যাদের পশুপাখি রয়েছে তাদের দুঃখের আজ অন্ত নেই, দুভোগের শেষ নেই।এমন কি এমন অনেক স্থানে রয়েছে যেখানে দুটি পা রাখার মতো একখণ্ড শুকনো মাটি নেই। গত 20 মে শুক্রবার গণমাধ্যমে দেখা যায় যে, জুমার নামাজ পানিতে দাঁড়িয়ে আদায় করেছেন বানবাসী লোকজন। এমতা অবস্থায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে, পানিতে দাঁড়িয়ে জানাজা আদায় করে মৃতদেহ পানিতেই ভাসিয়ে দিতে হবে, আল্লাহ না করুক!
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার্ত মানুষজন আশ্রয় নিচ্ছেন কিন্তু একেকটি জনপদের জন্য একটি দু’টি স্কুল কতটুকুই বা পর্যাপ্ত? এদিকে আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা অধিক হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতেও জায়গা নিতে পারছেন না। আবার অনেক জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও বানের পানির ফলে, কার্যত এতে তেমন কোনো উপকার হচ্ছে না। বন্যা দুর্গতদের মাঝে প্রায় সকল স্থানে, বিশুদ্ধ পানি থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য ওষুধ চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। হাহাকার করে আর্তনাত করছে মানুষজন। মানুষের দুর্দশার চিত্রটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট দিনাতিপাত করছেন সিলেটের মানুষ।
দুঃখের বিষয় সিলেটের অনেক অঞ্চলেই এখনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি। বানবাসীদের পান করার বিশুদ্ধ পানি নেই, ঘরে শুকনো খাবার নেই, প্রয়োজনীয় ঔষধ নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, বাঁচার আশায় আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গায়, বাসার ছাদে একটুখানি আশ্রয় কেন্দ্রে। সে সকল জায়গায় পৌছাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী। হাজার হাজার অসহায় মানুষ হাত বাড়িয়ে আছেন ত্রাণের জন্যে। ত্রাণ পৌঁছালে চলছে হুরাহুরি, কাড়াকাড়ি। মানুষ কী করবে? মানুষকে তো বাঁচতে হবে?
পরিশেষে, সরকারিভাবে অনেক এলাকায় ত্রাণ সহায়তা প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল্য। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অত্র মানুষের কাছে অতি দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। ত্রাণ সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে হবে এবং নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় জোরদার করতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। গৃহপালিত পশু-পাখিদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সরকারি দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও দেশের সামর্থ্যবানদের বন্যা দুর্গত মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে ।অনতিবিলম্বে সরকারের বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে অসহায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা রেখে দেশের সর্বত্র শান্তি কামনা করছি।
লেখক: মোঃ রোমান মিয়া
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা