বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন

বহুমাত্রিক সংকটে বাংলাদেশ 

 

মু, সায়েম আহমাদ:

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। পৃথিবীতে যতগুলো স্বাধীন দেশ আছে তন্মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অবিস্মরনীয়। বহু আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। কত নির্যাতন, কত অবহেলিত, কত লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে এদেশের জনগণ তার কোন ইয়াত্তা নেই। বুক ভরা আশা নিয়ে এ দেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করার পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এদেশ আমরা স্বাধীন দেশ হিসেবে পেয়েছি। আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জনের পিছনের উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বাস্তব চিত্র উপলব্ধি করা, বাস্তবায়ন করা। কিন্তু আমরা কতটুকু অর্থনৈতিক ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাস্তব চিত্র উপলব্ধি করতে পেরেছি সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

আজ এই স্বাধীন দেশ ভালো নেই, ভালো নেই দেশের জনগণ। চারিদিকে শুধু বহুমাত্রিক সংকট। নানান সংকটে ভুগছে সোনার বাংলা। সম্প্রতি, আমাদের দেশে চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ বলতে গেলে , নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে অধিকহারে। বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। স্বল্পআয়ের মানুষগুলো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হিমশিম খাচ্ছে। বরং বলা যায়, তাদের জন্য বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জিং এর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুমাত্রিক সংকটের বাংলাদেশে কেঁদে বাঁচে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। এই মানুষগুলোকে নিয়ে ভাববার মতো কেউ নেই।এমনকি নিত্যপণ্যের দামের প্রতিবাদে রাস্তায় কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই। যদিও করে থাকে তাহলে চোখে পড়ার মতো নয়। এর অর্থ এই নয় যে তারা বিষয়গুলো সহজভাবে মেনে নিয়েছেন। সামর্থ্য আছে বলেই কেনাকাটা করছেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও এরকম নয়। আমরা যদি টিসিবির ট্রাকের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব অসহায় মানুষের দৌড় প্রতিযোগিতা। যেই প্রতিযোগিতা শুধু বেঁচে থাকার লড়াই করার প্রচেষ্টা। যেই প্রতিযোগিতা পেটের ক্ষুধা নিবারণের প্রচেষ্টা। তবুও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে টিসিবির পণ্য কেউ পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছে না। কারণ টিসিবির পণ্যের তুলনায় মানুষের চাহিদা বেশি। দিনশেষে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা বাঁচতে চায়। কিন্তু তাদের নেই কোন ভরসা। বরং অসহায়ত্বই এখন তাদের নিত্য সঙ্গী। কোথাও আলো নেই, নেই কোন ভরসা। ভরসা তারা কোথায় পাবে? যে দেশের নীতিনির্ধারক মহল থেকে ” বাংলাদেশের মানুষ বেশি ভাত খায় বলে চালের দাম বেড়ে গেছে ” এমন যুক্তি শোনা যায়। নীতিনির্ধারক মহলরা শুধু এমন যুক্তি শুনিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি বরং ” চালের এত দাম বৃদ্ধির পরও দেশে কোনো হাহাকার নেই, আয় বেড়েছে বলে মানুষের কষ্ট হচ্ছে না। মানুষ এখন গরু-ছাগলকেও চাল খাওয়াচ্ছে ” আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক মহল এমন অদ্ভুত যুক্তিও বলতে দ্বিধাবোধ করেননি। দেশের নীতিনির্ধারক মহল মানুষের এমন অসহায়ত্বের সঙ্গে মশকরা করছেন নাকি অন্য কিছু নিয়ে মাতামাতি করছেন এসব কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

 

স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে নারী নির্যাতন ঘটেই চলছে। শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন এমন ঘটনাগুলো ঘটছে এই দেশে। ধর্ষণ, গুম-হত্যা এসবকিছু করা হচ্ছে অহরহ। সম্প্রতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। একজন শিক্ষার্থী এদেশের সম্পদ। পড়াশোনা শেষ করে এদেশের নেতৃত্ব দিবে। কেউ হবে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষক,কেউ হবে বড় অফিসার। আবার কেউ প্রধানমন্ত্রীও হতে পারে। আর সেই শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে! যা এই দেশের জন্য সত্যি হতাশাজনক এবং কলঙ্কজনক ঘটনা। গেল বছরের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান যদি দেখি তাহলে দেখা যাবে দেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট এক হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন নয়জন। এমন ঘটনা বা তথ্য গুলো থেকে বুঝা যায় এদেশে নারীদের নিরাপত্তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই দায় রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহল কখনোই এড়িয়ে যেতে পারেন না। অথচ এই নারী জাতি আমাদের দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু দিনশেষে পরিতাপের বিষয় হলো আমরা তাদের জন্য নিরাপদ জীবন যাপন করার সুযোগ করে দিতে পারেনি। আর কবে বা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে মনে।

এখনো আমাদের দেশে নিরাপদ সড়কের সংকট। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। মায়ের বুক খালি হচ্ছে, পরিবারের খুঁটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। কোলের ছোট্ট শিশুটি পিতৃহারা অথবা মাতৃহারা হচ্ছে। অর্থাৎ বলতে গেলে একটি পরিবারের স্বপ্ন হারিয়ে যাচ্ছে, দেশের স্বপ্ন হারিয়ে যাচ্ছে। সড়কে স্বজনহারা পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। আমাদের দেশে সড়কে মৃত্যুর পরিসংখ্যান যদি দেখি তাহলে ” রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ” এর সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র ২০২০ সালে দেশে চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৪৩১ জন নিহত এবং সাত হাজার ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং ওয়ার্ল্ড হেলথ র‍্যাঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম।

এছাড়াও ” বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ” বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০২১’-এ বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৬ হাজার ২১৩টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫১৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯ হাজার ৭৫১ জন। ৪০২টি রেল দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত এবং নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই যদি হয় আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনার অবস্থা তাহলে আমরা কীভাবে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করব? কীভাবে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব? কেননা, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরাপদ সড়ক ব্যবহারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যেমন দরিদ্র মানুষ বা সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে চলাচলে বাধ্য হন।

 

বর্তমানে আমাদের দেশে সর্বস্তরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিনিয়ত হচ্ছে দুর্নীতির ছড়াছড়ি। বিশেষ করে, বাংলাদেশ রেলওয়ে যেন দুর্নীতির কারখানা। টিকিট কালোবাজারি থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতির ছড়াছড়ি। তাদের এমন দুর্নীতির কারণে জনগণ আজ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এসব নিয়ে কোন কথা নেই, নেই কোন সুষ্ঠ জবাবদিহিতা। সোনার বাংলায় এমন ঘৃণ্য কাজ দেখে মনে বড় কষ্ট হয়। সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে কথা বলা মানে সরকারের সমালোচনা নয় বরং একজন সুনাগরিক হিসেবে এসব কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা নাগরিকদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অথচ আমরা ভুলে গেছি বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতি উৎখাত করতে হবে। দুর্নীতি আমার বাংলার কৃষক করে না। দুর্নীতি আমার বাংলার শ্রমিক করে না। দুর্নীতি করে শিক্ষিত সমাজ। আসলেই বাস্তবে তাই ঘটে চলেছে। ফলশ্রুতিতে, বিশ্বে সেরা দুর্নীতিতে আমরা সবসময় এগিয়ে থাকি। যা আমাদের জন্য এক অভিশাপ বা দুঃখের বিষয়। কেননা, একটা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দুর্নীতি বড় বাধা। 

 

দেশের এত এত সংকটের পরেও আমাদের নীতি নৈতিকতা আজ ধ্বংসের মুখে। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা নেই। নেই কোনো আন্তরিকতা। আছে শুধু একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ। অথচ মানুষ সামাজিক জীব হয়েও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত। এমনভাবে সুস্থ ধারার সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না। সুস্থ ধারার সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা থাকতে হবে, বিশ্বাস থাকতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় শুধু সমাজ ব্যবস্থাকে ঘিরে নয় বরং এদেশের শিক্ষক সমাজ ব্যবস্থাকে ঘিরেই এখন প্রশ্ন ওঠে। জাতির উন্নয়ন বা মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকরা যদি বিবেচিত হয়ে থাকে তাহলে তাদের সকল কর্মকান্ড হবে একটি জাতির পথপ্রদর্শক। সম্প্রতি, আমাদের দেশের কিছু শিক্ষকরা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পুরো শিক্ষক সমাজ ব্যবস্থা। তাদের নীতি নৈতিকতা অবক্ষয়ের কারণে আজ শিক্ষক সমাজ ব্যবস্থায় অন্ধকারের ছায়া নেমে এসেছে। কলুষিত হচ্ছে মহান পেশার অতীতের গৌরব ও মর্যাদার। সবার মুখে মুখে তাদের প্রতি ধিক্কার প্রতিবাদের সুর। অথচ এই মহান পেশা সুপ্রাচীন কাল থেকে যুগ যুগ ধরে সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আসছে। সবাই পরম মমতায়, মর্যাদায় ও ভালোবাসার চাদরে আগলে রাখছে পুরো শিক্ষক সমাজ ব্যবস্থাকে।

এদেশে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের হাহাকারের প্রতিধ্বনি। তারা তাদের ফসল উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য আদায় করতে পারছে না। ভুলে গেলে চলবে না যে, কৃষকরাই এদেশের মূল। তাদের উৎপাদিত ফসল থেকেই আমাদের বেঁচে থাকা। কিন্তু তবুও কেন যেন ওরা তাদের ন্যায্য অধিকার পায় না। যা সত্যি বেদনার কথা।

পরিশেষে বলতে চাই, সরকারের স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ সংকট নিরসনে সোচ্চার হতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে যেন জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের নারী সমাজের সর্বস্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই রাষ্ট্রের পাশাপাশি জনগণদের সোচ্চার হতে হবে। সেই সাথে দুর্নীতিবাজদের নাম প্রকাশ করে জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। তাহলে পরবর্তী সময়ে কেউ এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে সাহস পাবে না। আমাদের নীতি নৈতিকতার ভিত্তি আরো বেশি শক্তিশালী করতে হবে। ফলে, যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করবে। দেশের কৃষকদের কথা ভেবে তাদের জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই সরকারের উচিত হবে, দেশে যে বহুমাত্রিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের জন্য দ্রুত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে আর মানুষ বাঁচতে পারবে স্বাচ্ছন্দে।

 

লেখক: মু, সায়েম আহমাদ

কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

২০২২ © ডেইলি কালের ধব্বনি কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।
Design & Developed by Marshal Host 
akun pro jepang
akun pro rusia
akun pro thailand
akun pro kamboja
akun pro china
akun pro taiwan
akun pro hongkong
akun pro myanmar
akun pro vietnam
akun pro malaysia
link server internasional
link server internasional
link server internasional
pg soft
link server internasional
link server sensasional
pg soft
link server internasional
link server sensasional
pg slot