বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

বিবাহ বিচ্ছেদ: এক সামাজিক সমস্যা

মো. মনিরুল ইসলাম:

 

বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তৈরি হয় এক সামাজিক সম্পর্ক। আর এ সম্পর্কের লক্ষ হলো আজীবন একসাথে চলা ও জীবন যাপন করা। উভয়ের মাঝেই যদি পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়, তাহলে জীবন হয় এক বিনী সুতায় গাঁথার মত। এমন সম্পর্কের মাঝে থাকে অনাবিল সুখ, শান্তি, প্রেম-প্রীতি ও বৃদ্ধি পেতে থাকে ভলোবাসার আবেগ ঘন মুহুর্ত। উভয়ই যদি নম্র, শালীন ও আল্লাহ ভীরু হয়, তাহলে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেও জান্নাতে থাকার সৌভাগ্য হয়তো মিলবে। দুনিয়ার জীবনে চলার পথে ঠুনকো মনোমালিন্য, বিদ্বেষ, ঝগড়া স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে। অপরদিকে জান্নাতে শুধুই প্রশান্তি বিরাজ করে।

আমাদের মুসলিম সমাজে বিবাহ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো পাপ কর্ম থেকে বেঁচে থাকা ও পবিত্র সম্পর্ক কর্তৃক পরস্পর সুখ ও শান্তি লাভ করা। মুসলমানদের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ফরয। পাশাপাশি আমাদের সন্তানরা যেন মহান রব্বুল আলামীনের সহজ-সরল পথে বিচরণ করে এ প্রত্যাশা কামনা করা। কিন্তু এই সম্পর্কের মাঝেই অনেক পরিবারের মধ্যে হঠাৎ করেই সম্পর্কের ভাটা পড়ে যায়। কেউ কেউ বেছে নেয় বিচ্ছেদ নামক মাধ্যম। এই কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই ধ্বংস হয় অসংখ্য পরিবার। আবার অনেকেই ইচ্ছে করে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। দিনে দিনে নষ্ট হতে থাকে সুখের সংসার। এভাবেই এগিয়ে চলে অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন। ইতিমধ্যে যখন সমাজ, পরিবার, বন্ধুমনোভাবপন্ন মানুষগুলোর কাছে নীচু হয়ে যায় ঠিক তখনই মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তখন আর সইতে না পেরে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় বিচ্ছেদের। যেটা হালাল তবে নিকৃষ্টতম। আর এই বিচ্ছেদের বেশিরভাগ আগে চাওয়াটা হয় নারীদের। তাই বিচ্ছেদের সংখ্যায় নারীরাই এগিয়ে। পরবর্তীকালে নারীরাই আবার বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের চাওওয়াটা নারীদেরই আগে। এক জরিপে দেখা গেছে- ৭০.৮৫ শতাংশ নারীরা ডিভোর্স চায় এবং ২৯.২৫ শতাংশ পুরুষ স্ত্রীকে তালাক দেয়। বর্তমানে রাজধানীতেই বিবাহ বিচ্ছেদ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৪৯ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন। আমরা মনে করি, বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাবো। কিন্তু শান্তির পরিবর্তে অশান্তি বিরাজ করে প্রতিমুহূর্তে। এজন্য বিবাহ বিচ্ছেদ কে কমিয়ে আনতে হবে। সবারই উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে বিবাহর মত পবিত্র সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। পারিবারিক সম্পর্ক মধুর হলে জীবন হয় সুখময়। বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে শুধু দুইজন ব্যক্তি নয়, নস্যাৎ হয়ে যায় দুটি পারিবারসহ অসংখ্য মানুষ। কষ্টও পেতে হয় অবিরাম। সমাজ বিজ্ঞানীরা বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে নানা রকম কারণ উল্লেখ করেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়- প্রগতিশীল ও অভিজাত পরিবারের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি ঘটে থাকে। এর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের ঘাটতি প্রধানতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

 

এজন্য মানবিক আচরণ হয়ে যায় বিবেকহীন ও অশালীন। এই অবস্থান আর হাতাশার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পরকীয়ার সম্পর্ক বেছে নেয়। তাই ইসলামে সব সময় শালীন ও পর্দার প্রতি জোড় দিয়ে থাকে। যাতে করে সবাই নিজেকে সংযত ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে পারেন। যদিও বিবাহ- বিচ্ছেদ হালাল তবে

নিকৃষ্টতম। দাম্পত্য জীবনে তালাকের অধিকার পুরুষকে দেওয়া হয়েছে। মিলেমিশে থাকা বা পারস্পারিক জীবন-যাপন করা অসম্ভব হলে সর্বশেষ তালাক বা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ বেছে নেয়া যেতে পারে। প্রথম দিকে কিছু শর্ত রয়েছে যেমন- কিছু দিনের জন্য বিছানা আলাদা করা, বেত্রাঘাত করা, এক্ষেত্রেও সমাধান না হলে দুই পরিবারের মধ্যে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া।

উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। হতে হবে আদর্শিক, ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক। পৃথিবী মুমিনদের জন্য কারাগার স্বরূপ। ঘাত প্রতিঘাতের মোকাবিলা করেই সামনের পথে অগ্রসর হতে হয় মুমিনদের। এই দুনিয়ার জীবন কখনো সরল রেখায় চলে না। এই জীবনে দুঃখ কষ্ট, মান অভিমান সামাজিক সমস্যাবলি সব কিছুকে উপেক্ষা করে জীবনকে অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। আর মনকে উজার করে ছোট ছোট ভুলগুলোকে ক্ষমা করতে হয়। আর এ পথে চললে দুজনের মাঝেই সম্পর্ক মধুর হবে।

 

কুরআনুল করীমে জানা যায়- হযরত লুত আলাইহিসসালাম সালাতে ওয়াসালামের স্ত্রী অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে নি। আমরা সবাই জানি হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাতু ওয়া সালাম যে কঠিন দুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন কেউ আর এত বড় রোগে আক্রান্ত হন নি। তবুও তার স্ত্রী হযরত বিবি রহিমা কখনো তাকে ছেড়ে যান নি। অপর দিকে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া আ. এর কথা কে বা না জানে! ঈমানের দীপ্ত হয়ে তিনি সীমাহীন জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছিলেন।

বর্তমান সময়ে ঠুনকো কথার জন্য বেছে নেয় বিবাহ বিচ্ছেদ। ধৈর্য, সৎ ব্যবহার, উত্তম আচরণ, উত্তম চরিত্র যেন বিলুপ্ত প্রায়। সমাজে যখন অশালীনতা বেশি হয় ঠিক তখনই নৈতিকতায় অধোপতন ঘটে থাকে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে যেন ভাটা না পড়ে সে দিকে সর্বত্র খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ধর্মভিত্তিক সমাজব্যবস্থা৷ ঈমান গঠন৷ ও মহান আল্লাহর দেয়া সহজ সরল পথে অবিচল থাকা। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সুধারনা, সদাচারই পারে একটি সমাজকে কলুষিত মুক্ত রাখতে। আর দাম্পত্য ও সামাজিক জীবন সুখময় হলে, ইহকালে শান্তি ও পরকালে মিলবে মুক্তি।

 

লেখক; প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

 

শেয়ার করুন

২০২২ © ডেইলি কালের ধব্বনি কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।
Design & Developed by Marshal Host 
akun pro jepang
akun pro rusia
akun pro thailand
akun pro kamboja
akun pro china
akun pro taiwan
akun pro hongkong
akun pro myanmar
akun pro vietnam
akun pro malaysia
link server internasional
link server internasional
link server internasional
pg soft
link server internasional
link server sensasional
pg soft
link server internasional
link server sensasional
pg slot