বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন
গত ০৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ঢাকায় ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান ঘটলে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও লুঠতরাজ চালায়। বাদ যায়নি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সাওড়াতলী গ্রামে গড়ে উঠা লোকজ ঐতিহ্য জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি।
উপমহাদেশের বহু ইতিহাসের স্মারক নিয়ে জাদুঘর টি গড়ে তুলেন যুব সংগঠক ও সংস্কৃতি কর্মী মোঃ ইমাম হোসাইন। গত ২২ বছরে তিল তিল করে দেশের ভিতর ও বাহির হতে ১২ হাজার দুর্লভ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক সমাহার সংগ্রহ করেন। জাদুঘর টি পরিদর্শন করতে প্রতিদিনই উৎসুক জনতা ভীড় জমাতো।
জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরির যে সকল জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়-
️ ১৯২৭ সালের দূর্লভ গ্রামোফোন/কলের গানের মেশিন ও কয়েক শত দূর্লভ এলপি গানের ক্যাসেট। কবি নজরুল ইসলামের গান, বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ লতা মঙ্গেশকার, আশা বোসলে, হেমন্ত মুখোপ্যাধায়, কিশোর কুমার, আহমেদ রাফি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১ম গানের রের্কড ভাংচুর।
৪০০ বছরের পুরনো সিন্দুক ভাংচুর।
১২ শত বছরের পুরোনো কয়েন সহ বিশ্বের ২০০টি দেশের ৩ হাজার পিস দূর্লভ মূল্যবান মুদ্রা/টাকা লুটতরাজ।
বিশ্বের অন্যতম সুপ্রাচীন ব্যাংকিং “দি কুমিল্লা ব্যাংকিং কর্পোরেশন” এর দূর্লভ মূল্যবান স্মারক লুটতরাজ।
২২৫ বছর আগের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দূর্রভ দলিল লুটপাট।
১৫০টি দেশের ৫ হাজার পিস প্রাচীন দূর্লভ ডাকটিকিট লুটপাট।
কৃষিভিত্তিক সমাজে ব্যবহৃত প্রাচীন দূর্লভ যন্ত্রপাতি/উপকরণ ভাংচুর।
ভাষা আন্দোলন/স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের ৫০০০ পিস দূর্লভ আলোকচিত্র ও উপকরণ।মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত আর্টিলারি শেল, বুলেট, বন্দুক
যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে রিলিফের ০৭ কোটি কম্বলের মধ্যে একটা কম্বল স্মারক ভাংচুর।
মানব সমাজে ব্যবহৃত প্রাচীন তৈজসপত্র ভাংচুর।
প্রাচীন টাইপ রাইটার, ঘড়ি, কাঠ বক্স টেলিভিশন, রেডিও, ভিসিআর, বিভিন্ন মডেলের প্রাচীন ক্যামেরা, ভিডিও রেকর্ডার, বিভিন্ন মডেলের টেলিফোন, প্রেক্ষাগৃহে/সিনেমা হলে ব্যবহৃত সিনেমার রিল ক্যাসেট, প্রাচীন বিভিন্ন আমলের অডিও ভিডিও ক্যাসেট, বিভিন্ন মডেল-কোম্পানির মোবাইল ভাংচুর।
প্রাচীনকাল হতে ব্যবহৃত বিভিন্নরকম কলম, দোয়াত কলম ও বিখ্যাত সুলেখা কালি ভাংচুর।
প্রাচীন সমাজে শৈশব কৈশোর কালের ব্যবহৃত খেলার বিভিন্ন উপকরণ ভাংচুর।
প্রাচীন কুপি, হারিকেন, টর্চলাইট, প্রাচীন খড়ম, প্রাচীন চরকা ভাংচুর।
মানব সমাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাংচুর।
মানব সমাজে ব্যবহৃত কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রসাধনী ভাংচুর।
৩২০টি নদীর পানি ও মাটি, ৬৪টি জেলার মাটি গ্যালারী ভাংচুর।
সামুদ্রিক বিভিন্ন শামুক, ঝিনুক, মুক্তা, প্রবাল, কাঁকড়া জীবাশ্ম, ভাংচুর।
মানব সমাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভেষজ, বনোজ, ফলজ বৃক্ষ ও ফসলের মূল লুটপাট।
প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী হেজার কাটা, দূর্লভ বাঘের দুধ, হরিণের মেষ আম্বর/কস্তুরি লুটপাট।
সামুদ্রিক অক্টোপাস মাছের স্পেসিম্যান ভাংচুর।
৫ হাজার গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস, সাহিত্য, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আইন, কৃষি, বিশ্ব সাহিত্য, শিশু সাহিত্য, ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ, গবেষণার রেফারেন্স বই লুটপাট।
পৃথিবীর ১ম ব্যাকরণ গ্রন্থ, বিদ্যাসাগর রচিত গৌরীয় ব্যাকরণ গ্রন্থ লুটপাট।
দেশ-বিদেশের ১ হাজার ম্যাগাজিন ও স্মারক গ্রন্থ লুটপাট।
দেশের সকল জাতীয় দৈনিক সহ আঞ্চলিক পত্রিকার সমাহার লুটপাট।
প্রাচীন বাল্যশিক্ষার বই সমূহ, বিশ্ব বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার ৩৩টি খন্ড সংগ্রহ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও উপলক্ষে ছাপানো ২ হাজার পত্রিকা ও বিশেষ ক্রোড়পত্র, বিশ্বখ্যাত কয়েক হাজার মনীষীর আলোকচিত্র ও জীবনী লুটপাট
উপরোক্ত স্মারক সমূহ ভাংচুর শেষে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান জিনিস পত্র লুটতরাজ করে নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরাও ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীরা জানান দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্রসহ জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি ভাংচুর করেন।
প্রতিষ্ঠানটি ভাংচুরের সাথে সাথে উদ্যোক্তা মোঃ ইমাম হোসাইনের বাড়িঘর ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা৷ এ সময় জাদুঘরের আলমারিতে রাখা ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
উদ্যোক্তা মোঃ ইমাম হোসাইন বলেন “দেশের চলমান অস্থিরতায় জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি সেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। আমি থাকি কোটবাড়ি বাসায়। বাড়িতে কেউ ছিল না। প্রতিবেশীরা বাধা দিতে এলে তাদের কে গালমন্দ করে দুষ্কৃতকারীরা এবং অস্ত্র উঁচিয়ে ভীতি প্রদর্শন করে। জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি আমাদের এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ও পাঠক আসে। জাদুঘরের স্মারক সমূহ রাষ্ট্রের সম্পদ ছিল বহু সরকারি বেসরকারি গবেষক আসতেন গবেষণা সহায়তা নেওয়ার জন্য। এতে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হয়েছে আমার ও দেশের।
আমি প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”।