বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
আদালত প্রতিনিধিঃ জমির মূল মালিক ও দখলদার হলেও, যদি খতিয়ানে আপনার জমির মালিকানা অন্যের নামে লিপিবদ্ধ হয় অথবা কোনো করণিক ভুল থাকে, তখন আপনাকে কী করতে হবে?
১. প্রাথমিক পদক্ষেপ
The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ৪৩ ধারা ও প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড এর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দরখাস্ত বা রিপোর্ট পাওয়ার পর পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, প্রাথমিক খাজনা বিবরণী, কালেক্টরের দপ্তরে সংরক্ষিত খতিয়ানের কপি এবং অন্যান্য নথিপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান করবেন এবং করণিক ভুল সংশোধনের নির্দেশ দেবেন।
২. করণিক ভুলের ধরন
সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সংশোধনযোগ্য করণিক ভুলগুলির মধ্যে রয়েছে:
নামের ভুল
অংশ বসানোর ভুল
দাগসুচিতে ভুল
রেকর্ড এবং ম্যাপের মধ্যে অমিল
জরিপকালে বাবার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড না হওয়া ইত্যাদি
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আর.এস, এসএ, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি
সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ
ওয়ারিশ সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
মূল দলিলের ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/পিট দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা পত্র
আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রির সার্টিফাইড কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি
৪. ফি এবং সময়সীমা
খতিয়ান সংশোধনের ফি ১১৫০ টাকা এবং সাধারণত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে। সরকারিভাবে সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে ২০/- টাকার কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়।
৫. কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা
The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৪৯ ধারার (৪) উপধারা অনুযায়ী Board of Land Administration যে কোনো খতিয়ানে ভুল সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। তবে, বর্তমানে এ ক্ষমতা সরকারের পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের অধীনে রয়েছে।
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ানের বিষয়ে আদেশ প্রদান করতে পারেন। জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি গেজেটে চূড়ান্ত প্রকাশনার পর সংশোধনী দাবি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার্য।
খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধন
আবেদন গ্রহণ এবং প্রেরণ:
আবেদন প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে এন্ট্রি দিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পাঠানো হয়।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরজমিন তদন্ত এবং রেকর্ড যাচাই করে প্রস্তাব/প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন।
শুনানি এবং আদেশ:
প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর বা আবেদন প্রাপ্তির পরই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুনানির তারিখ ধার্য করেন এবং আবেদনকারী ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করেন।
ধার্য তারিখে শুনানি ও কাগজপত্র পরীক্ষা করে খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয়।
সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত এবং বিতরণ:
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সংশোধিত খতিয়ানের ৫টি কপি প্রস্তুত করেন।
প্রয়োজনীয় ফি আদায় সাপেক্ষে, ১টি কপি আবেদনকারীকে, ১টি মূল নথিতে, ১টি মূল খতিয়ান ভলিউমে, ১টি জেলা রেকর্ড রুমে এবং ১টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হয়।
রেজিস্টার-২ হালনাগাদ করে প্রতিবেদন দাখিল করার মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সেবা প্রাপ্তির সময়:
সাধারণত ই খতিয়ান সংশোধনের আদেশ পেতে সময় লাগে ৩০-৪৫ দিন। প্রথমে mutation land gov bd ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এখন অনলাইনের land gov bd এর মাধ্যমে জমির খতিয়ান বের করার সহজ পদ্ধতি।
প্রয়োজনীয় ফি:
কোর্ট ফি: ২০ টাকা
রেকর্ড সংশোধন ফি: ১০০০ টাকা
খতিয়ান ফি (প্রতি কপি): ১০০ টাকা
সেবা প্রাপ্তির স্থান:
উপজেলা/রাজস্ব সার্কেল ভূমি অফিস
ইউনিয়ন ভূমি অফিস
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী:
সহকারী কমিশনার (ভূমি)
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা
নামজারি সহকারী
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
সর্বশেষ নামজারি ও জমাভাগ/জমা একত্রিকরণের খতিয়ান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
মূল দলিলের ফটোকপি/সার্টিফাইড কপি
করণিক ভুলের স্বপক্ষে প্রমাণপত্র
হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা
আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রির সার্টিফাইড কপি (যদি থাকে)
আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
আবেদনকারীর সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
মনোনীত কোনো ব্যক্তি শুনানিতে থাকতে চাইলে ছবিসহ হলফনামার কপি
সেবা প্রাপ্তির শর্তাবলি:
দাবির স্বপক্ষে প্রমাণপত্রসহ আবেদন দাখিল করা। সঠিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। অন্যথায় আবেদনটি রিজেক্ট হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি:
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০
অ্যাড.রমজান আলী
জেলা ও দায়রাজজ আদালত কুমিল্লা